আমাদের দেশে ন্যায়বিচার বলে এখন কিছু নেই বললেই চলে। শুধু মিথ্যা মামলা দিয়ে কে কাকে ফাঁসাবে সেই ধান্দায় সবাই মশগুল! অবশেষে শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমর চৌধুরী কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাঁকে স্বজনরা ফুল দিয়ে বরণ করেন।
এ সময় সমর চৌধুরী বোয়ালখালী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং উপ-পরিদর্শক আরিফ ও আতিকুল্লাহসহ কয়েকজনের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, আটকের পর তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং ওই দিন সকালে থানা হাজতে তাঁকে লাথি মেরেছিলেন ওসি হিমাংশু।
নিজের বাসায় আলাপকালে সমর চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘২৭ মে সন্ধ্যায় আমরা চারজন আদালত থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিলাম। এ সময় বোয়ালখালী থানার উপ-পরিদর্শক আরিফসহ অন্য কয়েকজন সাদাপোশাকধারী আমাকে ধরে জোরপূর্বক একটি গাড়িতে তোলেন। এর পর আমাকে মারধর করতে করতে থানা হাজতে নিয়ে যান।
রাত ১২টার পর হাজত থেকে বের করে আমার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এর পর গাড়িতে তোলে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গামছা খুলে দেওয়া হয়। তখন বুঝতে পারি আমাকে চরণদ্বীপ এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে নেওয়া হয়েছে।
তখন এসআই আরিফ আমাকে বলেন, বাঁচতে চাইলে কর্ণফুলী পার হয়ে পালিয়ে যা। আমি রাজি হইনি। তখন আমাকে গুলি করার চেষ্টা করেন তিনি। আমি বলি, আমাকে সামনে থেকে গুলি কর। এরই মধ্যে আরিফের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। তখন কিছুটা দূরে গিয়ে এসআই আরিফ কথা বলেন। কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে শুনতে পাইনি।
পরে এসে বললেন, শালাকে মারা যাবে না। চলো নিয়ে যাই।সমর চৌধুরী ওই রাতের বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে আমাকে পুনরায় গাড়িতে তোলা হয়। এর পর নেওয়া হয় আমার গ্রামের বাড়িতে। আমার গ্রামের বাড়িটি পরিত্যক্ত। সেখানে পুলিশ সদস্যদের ‘পেয়েছি’ ‘পেয়েছি’ শব্দ বলতে শুনি। কী পেয়েছেন জানি না। দেখিওনি।
পরে আমাকে পুনরায় থানা হাজতে আনা হয়।তিনি বলেন, ‘ওই রাতে আমাকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। সকালে আমি থানার ওসি হিমাংশুকে দেখি। তাঁর কাছে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তখন তিনি আমার স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে আমাকে লাথি মারেন। তখন আমি হাজতের দেয়ালে ধাক্কা খাই। এতে আমার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়।’
‘থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমাকে বলেন, ‘তোর জন্য আমরা সফল হতে পারছি না। সঞ্জয়ের সম্পত্তি উদ্ধার হচ্ছে না। জবাবে আমি বলি, আমি তো কিছুই করছি না। এসব আদালতের বিষয়। আমার কী করার আছে। এতে তিনিও ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল করেন।’ যোগ করেন সমর।
ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ছবি তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিকেলে আমাকে হাজত থেকে বের করে একটি টেবিলের সামনে নেয় পুলিশ। ওই টেবিলে অস্ত্র ও লাল রঙের ট্যাবলেট ছিল। আমাকে দাঁড় করিয়ে পুলিশ ছবি তোলে। পরে আমাকে অস্ত্রটি হাতে নিতে বলে। আমি অস্ত্র হাতে নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে লাঠি দিয়ে সজোরে মারেন। এখনো শরীরে কালো দাগ আছে।
মূলত সমর চৌধুরীর সামনে ইয়াবা ও অস্ত্র রেখে তোলা ছবিটিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। প্রায় ৬৫ বছর বয়স্ক সমর চৌধুরীকে পুলিশ ফাঁসিয়ে দিয়েছে মর্মে অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকেই সমর চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ চলতে থাকে।
ওই দিন পুলিশ সমর চৌধুরীকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। আইনি লড়াইয়ে সমর চৌধুরী মামলা থেকে জামিন পান। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন তিনি। মুক্তির পর সমর চৌধুরী বলেন, লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশের কোনো ক্ষতি আমি করিনি।
তাঁর প্ররোচনায় পুলিশ আমাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি জামিনে মুক্ত। কিন্তু ভবিষ্যতে এই মামলা আমি কীভাবে চালাবো? আমি তো অপরাধ করিনি।’ এ সময় তিনি গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁর মুক্তির জন্য সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করায় চট্টগ্রামের আইনজীবী, সাংবাদিক ও সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তবে সমর চৌধুরীকে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ করা হলেও বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ হিমাংশু কুমার দাস বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সমর চৌধুরীর কাছ থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ